দিনাজপুর চিরিরবন্দর উপজেলার মাঠগুলো ছেয়ে গেছে সরিষার হলুদ ফুলে। কৃষকের স্বপ্ন দুলছে সরিষার মৌ মৌ গন্ধে। প্রতিকুল আবহাওয়া সত্তেও উপজেলায় সরিষার বাম্পার ফলন হয়েছে। বিভিন্ন মাঠে সরিষা ফুলের মৌ মৌ গন্ধ আর বিস্তৃর্ণ মাঠজুড়ে চোখে পড়বে হলুদ আর হলুদ রঙের সমারোহ। মৌমাছির আনাগোনা আর সরিষা ফুলের দৃষ্টিনন্দন দৃশ্য যেন প্রাণ জুড়ে যায়। এ যেন প্রকৃতির অপরুপ রুপের খেলা। ভোজ্য তেলের মূল্য ও চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় কৃষকরা সরিষা চাষে ঝুঁকে পড়েছেন। এতে সেচ ও সার কম লাগে। ফলে সরিষা চাষে খরচ কম এবং লাভ বেশি হয়। এছাড়াও ফুল ও পাতা ঝড়ে জৈব সার তৈরি করে জমির উর্বরতা বৃদ্ধি পায়। তাই অনেক কৃষক সরিষা চাষে ঝুঁকে পড়েছেন। এবার বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে।
উপজেলা কৃষি বিভাগ জানায়, জমিতে দু-একটি চাষ দিয়েই বা বিনা চাষেই জমিতে ছিটিয়ে সরিষা বীজ বপণ করা যায়। সরিষা আবাদে সেচ, সার ও কীটনাশক কম লাগে। কম খরচে সরিষা উৎপাদন হয়ে থাকে। বর্তমানে মাঠগুলোতে সরিষার ফুল ফুটেছে। সরিষা কেটে অনেক কৃষক বোরোধান চাষ করবেন। গত বছর উপজেলায় সরিষ আবাদ হয়েছিলো ৪১০ হেক্টর, চলতি মৌসুমে উপজেলায় সরিষার আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫১০ হেক্টর এবং অর্জিত হয়েছে ৫২৫ হেক্টর। গত বছরের চেয়ে এবছর ১১৫ হেক্টর বেশি জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছে।আবহাওয়া অনুকুলে থাকলে সরিষার ভালো ফলন হবে।
সরজমিনে দেখা যায়, উপজেলার ফতেজংপুর, আলোকডিহি,নশরতপুর, সাতনালা, সাঁইতাড়া, তেঁতুলিয়া, ঈসবপুর, আব্দুলপুর ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ মাঠগুলো সরিষার চাষাবাদ ভালো করেছেন চাষিরা। ফুলে ফুলে ভরে গেছে মাঠ। কৃষকের মনে বইছে আনন্দের জোয়ার।
উপজেলার ঈসবপুর ইউনিয়নের উত্তর সুকদেবপুর গ্রামের মফিজুর আলী ও আব্দুল বাতেন এবং নশরতপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ নশরতপুর গ্রামের কার্তিক সরকার জমিতে প্রণোদনার বীজ পেয়ে সরিষা চাষ করেছেন। চলতি মৌসুমে সরিষার ফলন বেশি হওয়ায় এবং বর্তমানে বাজারমূল্য তুলনামূলক বেশি হওয়ায় এবার বেশি লাভের আশা করছেন তারা।
সরিষা চাষি ফতেজংপুর ইউপির বড় হাশিমপুর গ্রামের মকবুল হোসেন বলেন, কৃষি বিভাগের সরকারি প্রণোদনার ভালো বীজ পেয়ে সঠিক সময় বীজ রোপণ, সঠিকভাবে রোগ নির্ণয়, রোগ নিরাময়ের জন্য সঠিক মাত্রায় কীটনাশকসহ ফুলফল বৃদ্ধির জন্য ভিটামিন ও বিভিন্ন প্রকার সার প্রয়োগ করতে হবে। তাহলেই আগাম ফসল ফলিয়ে তা বাজারজাত করতে পারলেই উচ্চ মূল্যে বিক্রি করা সম্ভব হলে অধিক মুনাফা পাওয়া যায়।
তিনি আরো বলেন, ১ বিঘা জমিতে সরিষা চাষ করতে বর্তমানে খরচ হয় অন্তত দেড় হাজার টাকা। ভালো ফলন হলে বিঘাপ্রতি ৬-৮ মণ সরিষা পাওয়া যায়। প্রতিমণ সরিষার বর্তমান বাজারমূল্য ৩ থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকা। অন্যান্য ফসল চাষ করে প্রতিবিঘায় যে পরিমাণ লাভ হয় তার চেয়ে ওই পরিমাণ জমিতে সরিষা চাষ করে দ্বিগুণ লাভ পাওয়া যায়। এছাড়াও সরিষা চাষ করলে ফুল ও পাতা ঝড়ে জৈব সার তৈরি হয়ে জমির উর্বরতা শক্তি বৃদ্ধি করে। সে কারণে জমিতে পরবর্তীতে রাসায়নিক সারের প্রয়োজন হয় না এবং ধানের ফলনও ভালো হয়। সরিষা চাষে একদিকে যেমন বেশি লাভ হয় অন্যদিকে জমির উর্বরতা শক্তি বৃদ্ধি পায়। সেদিক বিবেচনা করে সাধারণ কৃষকরাও সরিষা চাষের দিকে ঝুঁকে পড়েছেন।
কৃষকরা আরো জানান, কৃষি প্রণোদনার অংশ হিসেবে উপজেলা কৃষি বিভাগ থেকে অনেকে সরিষা চাষের জন্য সার ও বীজ বিনামূল্যে সহায়তা পেয়েছেন। জমিতে বীজ বপণ করে সরিষা ভালো হয়েছে। অন্যান্য ফসলের চেয়ে সরিষা চাষাবাদে খরচ কম। উৎপাদন ভালো হবে বলে তারা আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। উপজেলা কৃষি অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের পরামর্শ ও সরকারি সার্বিক সহযোগিতায় এবার সাফল্য অর্জন করা সম্ভব হবে বলে তারা আশা করছেন।
উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ জোহরা সুলতানা জানান, এ উপজেলার মাটি সরিষা চাষের জন্য উপযোগি। সরিষা চাষ করলে খাবার তেলের চাহিদা পূরণসহ পাতা ও ফুল পড়ে জৈব সার তৈরি করে জমির উর্বরতা বৃদ্ধি করে। এবছর প্রণোদনা বীজ ও সার দেয়া হয়েছে ২৮০০ জন কৃষককে ও বিভিন্ন প্রকল্পের প্রায় ৫০ টি গ্রুপে প্রদর্শনী বীজ দেয়া হয়েছে। সরিষা বারি-১৪ ও বারি-১৫ ও বারি-১৮ উপজেলায় সম্প্রসারণ করার চেষ্টা করছেন উপজেলা কৃষি বিভাগ। এ জাতের সরিষার ফলন বেশি এবং জীবনকাল কম। সরিষা কেটে কৃষকরা বোরোধানও উৎপাদন করতে পারবেন।