1. admin@bdprothombarta.com : admin :
দেশে শিশুশ্রমের হার ৪.৪%, ৮ শতাংশই যুক্ত ঝুঁকিপূর্ণ কাজে - বিডি প্রথম বার্তা
সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:৫৫ পূর্বাহ্ন

দেশে শিশুশ্রমের হার ৪.৪%, ৮ শতাংশই যুক্ত ঝুঁকিপূর্ণ কাজে

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত : বৃহস্পতিবার, ১৯ ডিসেম্বর, ২০২৪
  • ৮ বার পঠিত

দেশে শিশুশ্রমে যুক্ত অন্তত ৪ দশমিক ৪ শতাংশ শিশু, যাদের মধ্যে প্রায় ৮ শতাংশ শিশুই কোনো না কোনো ঝুঁকিপূর্ণ কাজে যুক্ত। শিশুশ্রমে যুক্ত এসব শিশুর স্কুলে না যাওয়ার আশঙ্কা পূর্বের তুলনায় ৬ গুণ বেড়েছে।

 

এডুকো বাংলাদেশ’র শিশু অধিকার ও কল্যাণ পরিস্থিতি বিশ্লেষণ প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

বুধবার (১৮ ডিসেম্বর) রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে গবেষণা প্রতিবেদনের মূল তথ্য উপস্থাপন করেন ইনস্পিরা অ্যাডভাইজরি অ্যান্ড কনসাল্টিং লিমিটেডের পোর্টফোলিও ম্যানেজার মোহাম্মদ আদনান রহমান।

 

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বর্তমানে দেশে শিশুশ্রমে যুক্ত ৪.৪ শতাংশ শিশু। তাদের মধ্যে ১২ থেকে ১০ বছরের শিশু রয়েছে ৯ শতাংশের বেশি। এছাড়াও এসব শিশুর মধ্যে ১৪ থেকে ১৭ বছরের ৭.৯ শতাংশ শিশুই ঝুঁকিপূর্ণ কাজে যুক্ত। এমনকি এসব শিশুর মধ্যে ছেলেশিশু মেয়েদের চেয়ে ৩ গুণ বেশি শ্রমে নিযুক্ত হয়।

এতে বলা হয়েছে, পথশিশুদের মধ্যে প্রায় ৩৮ শতাংশই পরিবারের মাধ্যমে শ্রমে যুক্ত হয়, যারা দিনে সর্বোচ্চ ২০০ টাকা বা সপ্তাহে ১ হাজার টাকার মতো উপার্জন করে। এমনকি শ্রমে নিয়োজিত শিশুদের মধ্যে স্কুলে না যাওয়ার আশঙ্কা ৬ গুণ বেশি দেখা গেছে।

 

বাল্যবিয়ে:

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশের বিভিন্ন এলাকায় বাল্যবিয়ে এখনো মারাত্মক আকারে প্রচলিত রয়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে, এখনো ৪৯.৬ শতাংশ মেয়ে ১৮ বছরের আগেই বিয়ে করেছে, যা ২০২২ সালে ছিল ৪০.৯ শতাংশ। এমনকি তাদের মধ্যে ৮.২ শতাংশ ১৫ বছরের আগেই বিয়ে করতে বাধ্য হচ্ছে। এক্ষেত্রে ধর্মীয় প্রথা, পরিবারের সম্মান, শিক্ষার অভাব এবং জাল কাগজপত্রের সাহায্যে গোপন বিয়ের সুযোগ হলো বাল্যবিয়ের মূল কারণগুলোর অন্যতম।

শারীরিক শাস্তি

গবেষণায় দেখা গেছে, প্রায় ৬৪.৬ শতাংশ শিশু অভিভাবকদের কাছ থেকে হালকা ও গুরুতর শাস্তির শিকার হয়, যা শারীরিক ও মানসিক সমস্যার কারণ হিসেবেও দেখা যায়। বিশেষ করে এসব শিশুর মধ্যে উদ্বেগ ও আত্মবিশ্বাসের অভাব দেখা যায়।

 

প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৩ সালের শিশু আইন গুরুতর শাস্তি নিষিদ্ধ করলেও হালকা চোটের শাস্তি অন্তর্ভুক্ত নয়। ২০১১ সালের উচ্চ আদালতের আদেশে স্কুলে শাস্তি কমলেও শিক্ষক- শিক্ষার্থীর মানসিক সংযোগ কম এবং পরামর্শের সুযোগ নেই।

 

কিশোর অপরাধ

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, দেশে কিশোরদের মধ্যে মাদকাসক্তির পরিমাণ দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। শুধু ২০২২ সালেই দেশের বিভিন্ন থানায় ৯২ হাজার ৯০৯টি মাদক উদ্ধারের মামলা নথিভুক্ত হয়েছে। গবেষণা বলছে, পথশিশুদের অর্ধেক মাদক সরবরাহ চেইনে যুক্ত এবং ছেলেরা মেয়েদের চেয়ে ৩ গুণ বেশি মাদক গ্রহণ করে। মাদকাসক্ত কিশোর গ্যাংয়ের সঙ্গে যুক্ত, যা চুরি, হয়রানি এবং নিরাপত্তা নিয়ে অভিভাবকদের উদ্বেগ বাড়ায়।

প্রাক-প্রাথমিকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষক মাত্র ৩ শতাংশ

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রতি ৬ শিশুর মধ্যে ৩ জন সহপাঠক্রমিক কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করেনি। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাত্র ৩ শতাংশ শিক্ষক প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার বিশেষায়িত প্রশিক্ষণ পেয়েছেন।

 

প্রাথমিক অনুসন্ধান থেকে দেখা গেছে, সেকেন্ডারি স্কুলে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে শিক্ষকদের মানসিক সম্পৃক্ততা অনেক কম। যার কারণে শিক্ষার্থীরা এ বয়সের সমস্যাগুলো শিক্ষকদের সঙ্গে শেয়ার করতে পারে না।

 

প্রতিবন্ধী শিশুদের অন্তর্ভুক্তি

গবেষণায় আরও বলা হয়েছে, বাংলাদেশে প্রায় ৬০ শতাংশ প্রতিবন্ধী শিশু স্কুলে যায় না, যা কুসংস্কার, অবকাঠামোগত ঘাটতি এবং অভিভাবকদের অজ্ঞতার কারণে ঘটে। যারা স্কুলে ভর্তি হয় তারা হয়রানি, সামাজিক বিচ্ছিন্নতার মুখোমুখি হয় এবং সেই সঙ্গে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষকের অভাব একটি মূল ভূমিকা পালন করে, যা তাদের ঝরে পড়ার হার বাড়িয়ে দেয়। তাদের বিভিন্ন চাহিদা পূরণের জন্য বাধ্যতামূলক অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষা-প্রশিক্ষণ অত্যন্ত জরুরি।

গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপনের সময় মোহাম্মদ আদনান রহমান শিক্ষার গুণগতমান, সুরক্ষা এবং কল্যাণসহ শিশুদের মুখোমুখি হওয়া গুরুত্বপূর্ণ সমস্যাগুলোর ওপর আলোকপাত করেন। প্রতিবেদনটি শিশুদের সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য বহু খাতভিত্তিক উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছে।

 

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মমতাজ বেগম। তিনি বলেন, শিশুদের সুরক্ষায় সবসময় তার পরিবারকেই দায়িত্ব নিতে হবে এবং যে কোনো ধরনের সহিংসতার বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকতে হবে। আমরা সময় সময় সন্তানদের জন্য নিকটাত্মীয়দের ওপর খুবই ভরসা করে থাকি। কিন্তু আমাদের মনে রাখতে হবে, যে কোনো বিপদ কিন্তু সবসময় খুব সেফজোন থেকেই বেশি আসে।

তিনি বলেন, বাবা-মা হিসেবে শিশু কার সঙ্গে কতটুকু মেলামেশা করবে, তা পরিবার থেকেই শিক্ষা দিতে হবে। পবিত্র কোরআনেও আল্লাহ সীমার বিষয়টি নির্ধারণ করে দিয়েছেন। আমরা ধর্মীয় শিক্ষা থেকেও সচেতনতাবোধের বিষয়টি শিক্ষা নিতে পারি।

মমতাজ বেগম বলেন, এনজিওগুলো সরকারের আয়নার মতো, যা আমাদের অবস্থান সম্পর্কে জানায়। আমি এই প্রতিবেদনের ফলাফল এবং সুপারিশগুলো বাস্তবায়নে উদ্যোগ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি। এডুকো এবং ইনস্পিরাকে ধন্যবাদ জানাই এই কাজের জন্য।

 

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, শিশুদের সুরক্ষা পরিবার থেকেই নিশ্চিত করতে হবে, কারণ শিশুরা পরিবারের ভেতরেও ঝুঁকিতে থাকে। তিনি মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়কে প্রতিবেদনের তথ্যের ভিত্তিতে পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানান।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব আরজু আরা বেগম এডুকো ও ইনস্পিরাকে এই উদ্যোগ এবং গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো খুঁজে বের করার জন্য ধন্যবাদ জানান। এসময় অনুষ্ঠানটির সমাপনী বক্তব্য রাখেন এডুকো বাংলাদেশের পলিসি ও অ্যাডভোকেসি ম্যানেজার হালিমা আক্তার। তিনি শিশুদের কল্যাণে একটি পৃথক অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠা এবং যৌন হয়রানি প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন প্রণয়নের দাবি জানান।

 

 

Facebook Comments Box
এ জাতীয় আরও খবর
© All rights reserved © 2022 BD Prothom Barta
Theme Customized BY LatestNews