চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার বারৈয়াঢালার পান দেশব্যাপী বিখ্যাত। বর্তমানে দিন দিন কমছে পান চাষির সংখ্যা। তবুও পূর্বপুরুষের ধারা অব্যাহত রাখতে এখনো অনেকেই যুক্ত আছেন পান চাষে। উপজেলার বেশ কয়েকটি এলাকায় পানের আবাদ হলেও বারৈয়াঢালা ইউনিয়নের গ্রামগুলোতে পান চাষ চোখে পড়ার মতো।
বারৈয়াঢালা ইউনিয়নের মহাদেবপুর গ্রামে ২০ শতক জমিতে পানের আবাদ করেন সুনিল চন্দ্র নাথ। বাবার হাত ধরে পান আবাদে যুক্ত হন তিনি। সুনিল বলেন, ‘আমার একটি মাত্র ছেলে চাকরি করে, মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে। আমি এটা করছি কারণ এটা আমার কাছে চাকরির মতো।’
ধর্মপুর গ্রামের কৃষক প্রিয় লাল নাথ ও সাধন চন্দ্র নাথ পৈতৃক সূত্রে পাওয়া পান চাষে এখনো যুক্ত আছেন। তারা বলছেন, একসময় অনেকগুলো পানের বরজ ছিল। মিরসরাইয়ের মিঠাছড়া বাজারের আড়তে তারা পান বিক্রি করেন। বর্তমানে শ্রমিক সংকট, নানা রোগবালাইয়ের কারণে দিন দিন আবাদের পরিমাণ কমে গেছে। পান চাষ করে পরিবার-পরিজন নিয়ে কোনোমতে তাদের পেট চলছে।’
বারৈয়াঢালা ইউনিয়নের পান চাষিরা কৃষি ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে বছরে ভালোই লাভ করেন। তারা অভিযোগ করেন, সরকারের কৃষি ব্যাংক তাদের ঋণ দিয়ে সহযোগিতা করলেও বছরের পর বছর দেখা মেলে না উপজেলা কৃষি অফিসের লোকজনের। লতা পচা রোগ এবং গুটি রোগে ক্ষেতের বেশ ক্ষতি হয়। বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির লোকজন এবং স্থানীয় কীটনাশক দোকানির পরামর্শ নিয়ে তারা রোগবালাই দমনে ব্যবস্থা নেন।
পান চাষি শ্রীধাম নাথ বলেন, ‘বারৈয়াঢালার পান ঢাকা, চট্টগ্রাম, ফেনীসহ দেশের বিভিন্ন শহরে পাঠানো হয়। পাইকাররা আগ্রহ নিয়ে চাষিদের কাছ থেকে পান কিনে থাকেন।’
সীতাকুণ্ড উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্য অনুযায়ী, এখানে মোট ৫০ হেক্টর জমিতে পানের আবাদ হয়। ২৫০ জন কৃষক বছরে ৬৫০ মেট্রিক টন পান উৎপাদন করেন। যার অধিকাংশই আবাদ হয় উপজেলার বারৈয়াঢালা ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে।
কৃষকদের অভিযোগ অস্বীকার করে সীতাকুণ্ড উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোহাম্মদ হাবিবুল্লাহ জানান, প্রত্যেক এলাকায় তাদের একজন উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আছেন। চাষিদের কাছে তার নাম্বারও থাকে। তবে পান চাষে সরকারের প্রদর্শনী খামার কিংবা অন্য সহযোগিতা না থাকায় শুধু পরামর্শসেবা দেওয়ার সুযোগ আছে বলে তিনি স্বীকার করেন।
কৃষি অফিস থেকে পান চাষিদের পরামর্শসেবা না দেওয়ার অভিযোগ তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কে এম রফিকুল ইসলাম। তিনি পান চাষিদের সরকারি বিভিন্ন সেবা-পরিষেবার আওতায় আনতে কৃষকদের লিখিতভাবে জানানোর পরামর্শ দেন।