মানিকগঞ্জ জেলা দলিল লেখক কার্যালয়ে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। এ সময় দলিল লেখকের লকার ভেঙে গ্রাহকের গচ্ছিত অর্ধশতাধিক জমির দলিলাদি নিয়ে গেছে ডাকাত দল। সোমবার (১৭ ডিসেম্বর) রাত সাড়ে তিনটার দিকে এই ঘটনা ঘটে।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী নিরাপত্তা কর্মী মোকসেদ আলী জানান, রাত সাড়ে তিনটার দিকে এই ঘটনা ঘটে। তাকে (নিরাপত্তা কর্মী) মারধর করে জিম্মি রেখে দলিল লেখকদের গুরুত্বপূর্ণ নথি নিয়ে যায় ডাকাত দল।
তিনি বলেন, ভবনের ভেতরে আমি দরজা বন্ধ অবস্থায় ছিলাম। এ সময় বাইরে লোহার গেটে শব্দ শুনতে পেয়ে বের হই। ততক্ষণে ডাকাতরা বাহিরের তালা ভেঙে আমাকে জাপটে ধরে। তারা (ডাকাত) মুখে মুখোশ পরা ছিল এবং হাতে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র ছিল। এ সময় আমার কাছে থাকা একটি মোবাইল ও ৪৩০০ টাকা নিয়ে নেয়। পরে বারান্দায় থাকা দলিল লেখকদের আলমারি ভেঙে দলিলাদি নিয়ে চলে যায়। আমাকে ভেতরের রুমে বন্দি করে বাহির থেকে তালা ঝুলিয়ে দেয়।
দলিল লেখক সমিতির নিজস্ব কোনো ভবন না থাকায় ২০১৬ সালে জেলা প্রশাসকের ভবন সংলগ্ন একটি ভবনের নিচতলা ভাড়া নেয় দলিল লেখক সমিতি। সেখানে শতাধিক দলিল লেখক একই ছাদের নিচে দলিল লেখাসহ দলিল সংক্রান্ত বিভিন্ন কাজ করে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, দলিল লেখক সমিতির ভবনে ঢুকতেই লোহার গেটের ডান ও বাম পাশে সহ-সভাপতি বশির আহমেদ বাবু এবং সাধারণ সম্পাদক আইয়ুব আলীর ব্যবহৃত লকার দুটি ভাঙা। লকারে থাকা কাগজপত্র দলিলাদি বিচ্ছিন্নভাবে এদিক-সেদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। ডাকাতির ঘটনায় অর্ধশতাধিক দলিল খোয়া গেছে বলে প্রাথমিকভাবে সমিতির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
দলিল লেখক সমিতির সহ-সভাপতি বশির আহমেদ বাবু বলেন, এই লকারে কোনো টাকা পয়সা বা স্বর্ণালংকার ছিল না। গ্রাহকের গুরুত্বপূর্ণ দলিলাদি দিয়ে পরিপূর্ণ ছিল। যারা এই ডাকাতির মাধ্যমে দলিলগুলো নিয়ে গেছে তাদের কোনো লাভ হবে না। কিন্তু আমার এবং গ্রাহকদের অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে গেছে। এটা কোনো ডাকাতি না, এটা পরিকল্পিত চক্রান্ত।
নিরাপত্তা কর্মীর গাফিলতি প্রকাশ করে সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক আইয়ুব আলী বলেন, নতুন এই নিরাপত্তা কর্মী ছয় মাস যাবত দায়িত্বে আছেন। এর ভেতর দুইবার এরকম ডাকাতির ঘটনা ঘটলো। প্রথমবার কোনো দলিলাদি ডাকাতি হয়নি। শুধুমাত্র ব্যবহৃত কম্পিউটার খোয়া গেছে। কিন্তু এবার গ্রাহকের দলিলাদি খোয়া যাওয়ায় গ্রাহকের কাছে কী জবাব দেবো ভেবে পাচ্ছি না।
সংগঠনটির সাবেক সভাপতি এমদাদুল হক বলেন, প্রাথমিকভাবে অর্ধশতাধিক দলিল খোয়া গেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। গ্রাহকরা দলিল নিতে আসলে আর আসল দলিল পাবে না। পুনরায় সার্টিফাইড কপি অফিস থেকে উত্তোলন করে দিতে হবে। মূল দলিল জমির মালিকের কাছে না থাকায় গ্রাহকরা ভোগান্তির শিকার হবেন। অন্যথায় এই দলিলের দাতা এবং গ্রহীতা তাদের পুনরায় এসে সাব রেজিস্ট্রার অফিসে জবানবন্দি দিয়ে নতুন দলিল তুলতে হবে। এতে করে গ্রাহকরা চরম ভোগান্তির শিকার হবেন। এ ঘটনা সুষ্ঠু তদন্ত এবং বিচার না হলে গ্রাহকরা আর দলিল লেখকদের ভরসা করতে পারবে না বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে জেলা সাব রেজিস্ট্রার শেখ মোহাম্মদ মছিউল ইসলাম বলেন, এটি একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। পুলিশ বিষয়টা নিয়ে কাজ করছে। উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে কোনো কিছু হয়ে থাকলে সে বিষয়ে কঠিন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
এ ব্যাপারে সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এসএম আমানুল্লাহ বলেন, অভিযোগের প্রেক্ষিতে সিসি টিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে আমরা তদন্ত করছি। আমাদের আইনগত ব্যবস্থা চলমান আছে।