ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ ও ভালুকায় কমলা চাষ করে সফল হয়েছেন দুই তরুণ। ঈশ্বরগঞ্জের তরুণের নাম মো. মাহফুজ। তিনি উপজেলার সরিষা ইউনিয়নের লংগাই গ্রামে চায়না ছোট জাতের কমলা বাণিজ্যিকভাবে চাষ করেছেন। ভালো দাম পাওয়ায় খুশি তিনি। কমলা বিক্রি করে ভালো দাম পাচ্ছেন ভালুকার যুবক শহিদ আহাম্মেদও। তিনি উপজেলার ডাকাতিয়া ইউনিয়নের আখালিয়া গ্রামে কমলা চাষ করে সফল হয়েছেন।
দুটি বাগানে গিয়ে দেখা যায়, গাছে প্রচুর কমলা ধরেছে। গাছের ডাল কমলার ভারে নুয়ে পড়েছে। মনোযোগ দিয়ে পরিচর্যা করছেন শ্রমিকেরা। তাদের দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন স্বপ্নবাজ দুই তরুণ। স্থানীয়রা কমলা খেতে এবং কিনতে আসছেন। পাইকাররাও বিভিন্ন বাজারে নিয়ে বিক্রির জন্য কিনে নিচ্ছেন টাটকা কমলা।
স্থানীয়রা জানান, কয়েক বছর আগেও মাহফুজ ও শহিদকে এলাকার অনেকেই চিনতেন না। কিন্তু কমলা চাষের পর ব্যাপক পরিচিতি পেয়েছেন তারা। এখন সবাই চেনেন সফল উদ্যোক্তা হিসেবে। তাদের দেখাদেখি অনেকেই কমলা চাষে ঝুঁকছেন। তারাও কমলা চাষে উদ্বুদ্ধ করছেন। পাশাপাশি সফল হওয়ার নানা পরামর্শ দিচ্ছেন।
লংগাই গ্রামের হযরত আলী বলেন, ‘মাহফুজ নিজের মেধা ও শ্রম দিয়ে সফল হয়েছেন। সে দিনের বেশিরভাগ সময় বাগানে কাটায়। স্থানীয়রা বাগানে গেলে কমলা খেতে দেন। অনেকে বিনা মূল্যে কয়েকটি করে কমলা নিয়ে যান। তার সফলতায় আমরা খুশি।’
মাহফুজের বাগানের শ্রমিক জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘বিভিন্ন এলাকায় শ্রমিক হিসেবে কাজ করেছি। ৪ বছর আগে বাড়ির কাছে কমলা বাগান হওয়ায় মাহফুজের সঙ্গে যোগাযোগ করি। সে শ্রমিক হিসেবে কাজ দিয়েছে। বাড়ির কাছে কাজ করে যা পাই, তা দিয়েই সংসার চলে।’
আখালিয়া গ্রামের বাসিন্দা সারোয়ার হোসেন বলেন, ‘টাকা রোজগার করে জীবনের মোড় ঘোরাতে বিদেশ গিয়েছিল শহিদ। তাতে আরও ক্ষতিগ্রস্ত হন এই তরুণ। পরে দেশে ফিরে কমলা চাষ করে লাভবান হন। এখন তিনি আয় করছেন লাখ লাখ টাকা।’
শহিদের কমলা বাগানে কাজ করেন ইদ্রিস। তিনি জানান, বাগান পরিচর্যাসহ বিভিন্ন ধরনের কাজ করেন তিনি। বাগানে কোনো ধরনের রাসায়নিক সার ব্যবহার করা হয় না। জৈবিক পদ্ধতিতে চাষাবাদ করায় কমলাগুলো রাসায়নিকমুক্ত। খেতেও বেশ সুস্বাদু। এ জন্য ভালো দামে সহজেই বিক্রি করা যাচ্ছে।
সফল কমলা চাষি মাহফুজ বলেন, ‘ইউটিউবে দেখেছি অনেকেই কমলা চাষে লাভবান হচ্ছেন। তাই নিজেও সাহস করে ৪ বছর আগে ৪০ শতাংশ জমিতে ৯৭টি কমলার চারা রোপণ করেছি। গত বছর কিছু ফলন হয়। এবার প্রায় ৭০ মণ কমলা ধরেছে। অনেক কমলা পেকে গেছে। এগুলো ১৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। সবমিলিয়ে ৪ লাখ ২০ হাজার টাকার কমলা বিক্রির আশা করছি।’
কমলা চাষি শহিদ আহাম্মেদ বলেন, ‘ইউটিউব দেখে দেড় একর জমিতে চায়না জাতের ২৩০টি ও দার্জিলিং জাতের ৭০টি চারা লাগিয়েছি। বাগানে প্রায় ২০০ মণ কমলা ধরেছে। কয়েক লাখ টাকার কমলা বিক্রি করেছি। সব মিলিয়ে ১২ লাখ টাকার কমলা বিক্রির আশা করছি। কলম পদ্ধতিতে চারাও বিক্রি করছি। এতেও ভালো লাভ হবে।’
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ময়মনসিংহের উপপরিচালক ড. নাছরিন আক্তার বানু বলেন, ‘চলতি বছর জেলায় ১৯ হেক্টর জমিতে কমলা চাষ হয়েছে। এরমধ্যে ঈশ্বরগঞ্জে ১ হেক্টর জমিতে ও ভালুকায় ১০ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে। মাহফুজ ও শহিদ কমলা চাষ করে লাভবান হচ্ছেন। তাদের স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তারা দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন। অন্যদেরও কমলা চাষে আগ্রহী করা হচ্ছে।’