অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ড রাজ্যে ১০ বছর বয়সী শিশুরাও যদি গুরুতর সংঘাত, হত্যা বা বাড়িতে চুরির মতো অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়, তাহলে প্রাপ্তবয়স্কদের মতোই কঠোর শাস্তি পাবে। সম্প্রতি কিশোরদের দ্বারা সংঘটিত অপরাধের কারণে জনগণের ক্ষোভের প্রতিক্রিয়া হিসেবে এমন কঠোর এই শাস্তির বিধান পাস করেছে কুইন্সল্যান্ড রাজ্য সরকার।
রাজ্য সরকারের দাবি, এই আইন অপরাধের প্রবণতা কমাবে। তবে বিশেষজ্ঞদের অনেকে বলছেন, এমন কঠোর শাস্তি কিশোর অপরাধ কমানোর বদলে বাড়িয়ে দিতে পারে। এমনকি, এই সংস্কারের সমালোচনা করে জাতিসংঘ বলেছে, এটি শিশুদের মানবাধিকার লঙ্ঘন ও আন্তর্জাতিক আইন বিরোধী।
বৃহস্পতিবার (১২ ডিসেম্বর) ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানায়, কুইন্সল্যান্ডের লিবারেল ন্যাশনাল পার্টি গত অক্টোবরের নির্বাচনে জয়ী হয়েছে। তারা নির্বাচনী প্রচারণায় এই নীতিকে অগ্রাধিকার দিয়ে বলেছিল, এই আইন অপরাধীদের অধিকারের চেয়ে ভুক্তভোগীদের অধিকারের পক্ষে।
‘অ্যাডাল্ট ক্রাইম, অ্যাডাল্ট টাইম’ নামে পরিচিত নতুন আইন অনুযায়ী, শিশুদের দ্বারা সংঘটিত ১৩টি অপরাধের জন্য কঠোর শাস্তি প্রযোজ্য হবে। এই আইনে হত্যার জন্য আজীবন কারাদণ্ড বা ন্যূনতম শাস্তি কার্যকর হবে।
কুইন্সল্যান্ড পুলিশ ইউনিয়ন এই পরিবর্তনকে সঠিক দিকের একটি বড় পদক্ষেপ হিসেবে প্রশংসা করেছে। নতুন অ্যাটর্নি-জেনারেল ডেব ফ্রেকলিংটন বলেছেন—এটি আদালতকে অপরাধের প্যাটার্ন বিশ্লেষণের সুযোগ দেবে এবং অপরাধীদের দায়বদ্ধ করবে।
তবে ফ্রেকলিংটন স্বীকার করেছেন, এই পরিবর্তন আন্তর্জাতিক মানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় এবং আদিবাসী শিশুরা এতে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
অস্ট্রেলিয়ার শিশু কমিশনার অ্যান হলন্ডস এই পরিবর্তনকে আন্তর্জাতিকভাবে বিব্রতকর বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, এই আইন আমাদের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ শিশুদের লক্ষ্য করছে, যা মানবাধিকারের প্রতি অবহেলার চরম উদাহরণ। তাছাড়া এটা প্রমাণিত যে, কম বয়সে বিচার ব্যবস্থার সংস্পর্শে আসা কোনো শিশু ভবিষ্যতে আরও গুরুতর অপরাধ করতে পারে।
এদিকে, আইন বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, কঠোর শাস্তির কারণে শিশুদের দোষ স্বীকার করার প্রবণতা কমে যেতে পারে। এর ফলে আদলতের বিচার প্রক্রিয়া আরও বেশি বিলম্বিত হতে পারে।
রাজ্যের পার্লামেন্টে বিলটি পাস হওয়ার পর কুইন্সল্যান্ডের প্রিমিয়ার ডেভিড ক্রিসাফুলি বলেন, এই আইনটি কুইন্সল্যান্ডের প্রতিটি বাসিন্দার জন্য, যারা কিশোর অপরাধের ভুক্তভোগী হয়েছেন।
অস্ট্রেলিয়ার পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য বলছে, গত ১৪ বছরে কুইন্সল্যান্ডে কিশোর অপরাধ অর্ধেকে নেমে এসেছে। ২০২২ সালে এটি রেকর্ডকৃত ইতিহাসের সর্বনিম্ন পর্যায়ে পৌঁছায় ও তখন থেকেই এই হার স্থিতিশীল রয়েছে।