মোহাম্মদ রুবেল, কিশোরগঞ্জ:
কিশোরগঞ্জ শহরের পাগলা মসজিদের ১০টি দানবাক্স খুলে এবার পাওয়া গেল ২৯ বস্তা টাকা। এছাড়াও রয়েছে বিদেশী মুদ্রাসহ স্বর্ণালঙ্কার। এবার ৩ মাস ১৩ দিন পর দান বাক্সগুলো খোলা হয়েছে। দিন-দিন দানের পরিমান বৃদ্ধি পাওয়ায় এবার একটি সিন্দুক বাড়ানো হয়েছে। এখন মোট সিন্দুকের সংখ্যা ১০টি।
শনিবার সকাল ৭ টায় মসজিদ কমিটির সভাপতি জেলা প্রশাসক ফৌজিয়া খান, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাছান চৌধুরী ও অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মিজাবে রহমত এর উপস্থিতিতে সিন্দুকগুলো খোলা হয়। এরপর মসজিদের দোতলার ফ্লোরে টাকা ঢেলে চলছে গণনা কাজ। এর আগে গত ১৭ আগস্ট ৯টি দানবাক্সে পাওয়া গিয়েছিল ৭ কোটি ২২ লাখ ১৩ হাজার, ৪৬ টাকা।
টাকা গণনার কাজে মসজিদ কমপ্লেক্স মাদরাসার প্রায় ১২৭ ও আল- জামিয়াতুল ইমদাদিয়া থেকে ১৫৫ ছাত্র, ও ৩৬ জন শিক্ষক ও রূপালী ব্যাংকের ৭৫ জন স্টাফ গণনায় অংশ নিয়েছেন। দেশি মুদ্রার পাশাপাশি সিন্দুকে বিদেশি মুদ্রাও পাওয়া গেছে। এ কাজ তদারকি করছেন ১২ জন ম্যাজিস্ট্রেটসহ মসজিদ কমিটির অন্যান্য সদস্যরা। মোতায়েন রয়েছে পর্যাপ্ত সেনাবাহিনী, পুলিশ ও আনসার সদস্য।
মসজিদ পরিচালনা কমিটি সূত্রে জানা গেছে, শনিবার সকাল সোয়া ৭টার দিকে জেলা প্রশাসক ফৌজিয়া খান ও পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাছান চৌধুরী এবং দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে মসজিদের ১০টি দান দানবাক্স খোলা হয়েছে। দান দানবাক্সগুলো খুলে ২৯ টি বস্তায় ভরে টাকাগুলো মসজিদের দোতলায় আনা হয়েছে গণনার জন্য।
টাকা গণনা ও পর্যবেক্ষণে রূপালী ব্যাংকের এজিএম রফিকুল ইসলাম এবং মসজিদ কমপ্লেক্সে অবস্থিত মাদরাসা ও এতিমখানার শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা অংশ নিয়েছেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, বিপুল পরিমাণ টাকা মসজিদের দোতলার মেঝেতে দুই সারিতে লম্বা করে ফেলে ছাত্র-শিক্ষক তিন সারিতে বসে মুদ্রামান অনুযায়ী পৃথক করছেন। টাকা গণনার মেশিনের সাহায্যে টাকা গণনা করে বান্ডিল বেঁধে মুদ্রার মান অনুযায়ী পৃথক করে রাখা হয়েছে।
মসজিদের সভাপতি জেলা প্রশাসক ফৌজিয়া খান সাংবাদিকদের জানান, বর্তমান মসজিদটি ভেঙে এখানে ৬তলা ভবনের আন্তর্জাতিক মানের দৃষ্টি নন্দন মসজিদ কমপ্লেক্স করার জন্য আমরা ইতিমধ্যে কাজ হাতে নিয়েছি। আশা করি কিছুদিনের মধ্যে আমরা কাজ হাতে নিব।
জনশ্রুতি রয়েছে, বহু বছর আগে এক আধ্যাত্মিক পাগল সাধকের বাস ছিল কিশোরগঞ্জ শহরের হারুয়া ও রাখুয়াইল এলাকার মাঝপথে প্রবাহিত নরসুন্দা নদের মধ্যবর্তী স্থানে জেগে ওঠা উঁচু টিলাকৃতির স্থানটিতে। মুসলিম-হিন্দু নির্বিশেষে সব ধর্মের লোকজনের যাতায়াত ছিল ওই সাধকের আস্তানায়। ওই পাগল সাধকের মৃত্যুর পর তাঁর উপাসনালয়টিকে কামেল পাগল পীরের মসজিদ হিসেবে ব্যবহার শুরু করে এলাকাবাসী। কালক্রমে নাম হয়ে যায় পাগলা মসজিদ।