অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে কিশোরগঞ্জ জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের তিন বছরের কমিটি সাত বছর পার করছে। এর মধ্যে আট মাসের বেশি সময় ধরে সভাপতি পদে কেউ নেই। ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবেও কাউকে দায়িত্ব দেওয়া হয়নি। এতে স্থবির হয়ে পড়েছে দলীয় কার্যক্রম। নেতা-কর্মীদের মধ্যে দেখা দিয়েছে ক্ষোভ ও অসন্তোষ।
পদপ্রত্যাশী নেতা–কর্মীদের ভাষ্য, দীর্ঘদিন ধরে সংগঠনের স্থবিরতার কারণে দলীয় শৃঙ্খলা ভেঙে পড়ার পাশাপাশি ঝিমিয়ে পড়েছে সাংগঠনিক কার্যক্রম এবং নেতা-কর্মীদের মধ্যে দেখা দিয়েছে হতাশা।
জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের পদপ্রত্যাশী ও জেলা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এ কে শিবলী বলেন, বর্তমানে জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের যে কমিটি আছে, সেটা সম্পূর্ণ অবৈধ। পুরোনো নেতৃত্বে জেলা কমিটি চলতে পারে না। যাঁরা যোগ্যতাসম্পন্ন নেতা রয়েছেন এবং যাঁরা সঠিকভাবে দলকে নেতৃত্ব দিতে পারবেন, তাঁদের নতুন করে দায়িত্ব দেওয়া উচিত। এতে সংগঠন প্রাণ ফিরে পাওয়ার পাশাপাশি দলীয় কার্যক্রমও সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হবে।
নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে ও দলীয় সূত্রে জানা যায়, ২০১৬ সালের ১৮ জুলাই কেন্দ্র থেকে সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. শরিফুল ইসলামকে সভাপতি ও প্রভাষক মো. শামীম আহম্মদকে সাধারণ সম্পাদক করে ১২ সদস্যবিশিষ্ট কিশোরগঞ্জ জেলা আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের একটি আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন সহসভাপতি খায়রুল বাশার, মোখলেছুর রহমান, তাসলিম সাজ্জাদ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. ওয়ারিসুজ্জামান, আবদুস সাত্তার, মো. জাকির হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক শহিদুল ইসলাম, মুত্তাকিল পলাশ, প্রচার সম্পাদক মো. মোশাররফ হোসেন ও মো. জিয়াউল হক। তিন বছরের এ আংশিক কমিটির বয়স সাত বছর হয়ে গেলেও দেখা মেলেনি পূর্ণাঙ্গ কমিটির।
আট মাস আগে জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের এক বর্ধিত সভা ঘিরে দলীয় বিশৃঙ্খলার অভিযোগে অব্যাহতি দেওয়া হয় সভাপতি শরিফুল ইসলামকে। এরপর লিখিত বা মৌখিকভাবে কেন্দ্র থেকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবেও দায়িত্ব দেওয়া হয়নি কাউকে। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, কমিটির মেয়াদ তিন বছর থাকলেও সাত বছর পার হয়ে যাচ্ছে, কিন্তু নতুন কমিটি হচ্ছে না। দীর্ঘদিন ধরে সম্মেলন না হওয়ায় এবং দলীয় কোন্দলের কারণে জেলার অন্যান্য উপজেলা ও পৌর কমিটিতেও এর প্রভাব পড়েছে। অনেক উপজেলা কমিটির মেয়াদ শেষ হলেও জেলা কমিটির কারণে নতুন কমিটি করা সম্ভব হচ্ছে না।
এ বিষয়ে জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের ১ নম্বর সহসভাপতি খায়রুল বাশার বলেন, ‘যেহেতু কেন্দ্র থেকে সভাপতিকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে, তাই গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, ১ নম্বর সহসভাপতি হিসেবে আমাকেই ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব দেওয়ার কথা। কিন্তু দীর্ঘ আট মাস হয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত আমাকে বা অন্য কাউকে দায়িত্ব দেওয়া হয়নি। এ নিয়ে সংগঠনের নেতাদের মধ্যে অসন্তোষ বিরাজ করছে।’ এখন সংগঠনের কার্যক্রম কীভাবে চলছে, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এইভাবে নিজেরা নিজেরাই অঘোষিতভাবে সভাপতি বানিয়ে চালিয়ে দিই। আসলে এভাবে কোনো সংগঠন চলতে পারে না। অচিরেই এ বিষয়ে কেন্দ্র থেকে উদ্যোগ নেওয়া উচিত।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের কয়েকজন নেতা জানান, সম্মেলন দলের প্রাণ। সম্মেলন না হলে নেতা-কর্মীদের মনে একঘেয়েমি চলে আসে। রাজনীতির যে আকর্ষণ, তা নষ্ট হয়ে যায়। দলের ভেতরে নানা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। এসব পরিহার করে জেলা সম্মেলন খুবই প্রয়োজন। গঠনতন্ত্রে রয়েছে তিন বছরের বেশি কোনো কমিটি থাকবে না। যদি তিন বছরের বেশি হয়, তাহলে আহ্বায়ক কমিটি হবে। আহ্বায়ক কমিটির মাধ্যমে সম্মেলন হবে। অথচ সাত বছর পার হয়ে যাচ্ছে কোনো কমিটি হচ্ছে না।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০১৬ সালে কমিটি ঘোষণার পর সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক কিছুদিন এক সঙ্গে মিলেমিশে থাকলেও এর পর থেকে কোন্দল তৈরি হয় তাঁদের মধ্যে। দীর্ঘদিন একসঙ্গে কোনো কর্মসূচিও পালন করা হয়নি। আবার ১২ সদস্যের আংশিক কমিটিও সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে ঘিরে দুই ভাগে বিভক্ত। তাই আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দলে দুই পক্ষের মধ্যে অস্থিরতা চলছে। গত বছরের ১৬ সেপ্টেম্বর জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে বর্ধিত সভা হয়। সেখানে পাল্টাপাল্টি স্লোগান দেওয়াকে কেন্দ্র করে জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি শরিফুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক শামীম আহম্মেদের অনুসারীর মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এ সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ব্যর্থ হয়ে সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতারা মঞ্চ ত্যাগ করে চলে যান। এ ঘটনায় পরে সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির দপ্তর সম্পাদক আজিজুল হক স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে দলীয় বিশৃঙ্খলার অভিযোগে কিশোরগঞ্জ জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি শরিফুল ইসলামকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। এর পর থেকেই সভাপতির পদ শূন্য।
জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. শামীম আহম্মদ বলেন, সভাপতি বা ভারপ্রাপ্ত সভাপতি কাউকে আনুষ্ঠানিকভাবে দেওয়া না হলেও সংগঠনের কার্যক্রম থেমে নেই। এর মধ্যে করোনার কারণে দলীয় কার্যক্রম বাধাগ্রস্তের পাশাপাশি বর্ধিত সভাও করা যায়নি। বিভিন্ন প্রতিকূলতার কারণে কমিটি দেওয়া সম্ভব হয়নি। তবে অচিরেই সম্মেলন করে পুরোনো কমিটি ভেঙে নতুন কমিটি করা হবে। কারণ, সম্মেলন মানেই নতুন নেতৃত্ব। সৎ, যোগ্য ও ত্যাগী নেতাদের নতুন কমিটিতে মূল্যায়ন করা হবে।
সম্পাদক : মোঃ মুরসালিন তালুকদার বার্তা সম্পাদকঃএম আর জয় (সাংবাদিক) অফিস : ২৪ পুরানা পল্টন, ড.নওয়াব আলী টাওয়ার লিফটের ৫ ইমেইল : bdprothombarta@gmail.com