কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ উপজেলার জাফরাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েমের বিরুদ্ধে সরকারি বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ, সেবার বদলে হয়রানি ও অসদাচরণের অভিযোগ এনে মানববন্ধন করেছে বিক্ষুব্ধ জনতা। গতকাল রোববার বিকাল সাড়ে তিনটা থেকে জাফরাবাদ উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে কিশোরগঞ্জ-করিমগঞ্জ সড়কে জাফরাবাদ ইউনিয়নবাসীর ব্যানারে ঘন্টাব্যাপী এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। মানববন্ধনে উক্ত ইউনিয়ন পরিষদের ছয় সদস্য, সংরক্ষিত আসনের দুই মহিলা সদস্য ও ইউনিয়নের গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গসহ পাঁচ শতাধিক মানুষ অংশ নেন। মানববন্ধনে বক্তারা অভিযোগ করেন, ইউপি চেয়ারম্যান আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েম নৌকা প্রতীক নিয়ে পাশ করার পর গত ১৮ মাসে ইউনিয়ন পরিষদের বিভিন্ন বরাদ্দ থেকে ২৫ থেকে ৩০ লাখ টাকার লুটপাট করেছেন। এর মধ্যে সুনির্দিষ্ট আটটি প্রকল্পের কোনো কাজ না করেই ৮ লাখ ৩৭ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেছেন। এর আগে ওই চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে গত ১৮ এপ্রিল সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, জেলা প্রশাসক, উপজেলা পরিষদ, উপজেলা প্রশাসন ও দুর্নীতি দমন কমিশনসহ সরকারি বিভিন্ন দফতরে এসব লুটপাটের ব্যবস্থা নিতে লিখিত অভিযোগ দেন পরিষদের ৮ সদস্য। অভিযোগের পরও তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় সড়কে মানববন্ধনে নামেন ইউনিয়নবাসী। অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, ইউনিয়নে উন্নয়ন সহায়তা কর্মসূচিতে বরাদ্দের ৮ লাখ ৩৭ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেন ইউপি চেয়ারম্যান আবু সাদাৎ মোঃ সায়েম। এর মধ্যে ২০১৯-২০ অর্থ বছরে দুই লাখ টাকা ব্যয়ে ইউনিয়নের আজিমগঞ্জ বাজারে পানি নিষ্কাকাশনের দুটি নালা নির্মাণ করেন চেয়ারম্যান। পরে চেয়ারম্যান ২০২২ সালের মে মাসে নালা দুটি অপসারণ চাইলে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের অনুমতি মেলেনি। উপজেলা প্রশাসনের অনুমতির তোয়াক্কা না করে চেয়ারম্যান একই মাসে অবৈধভাবে নিলাম ডেকে নালা দুটির পুরোনো মালামাল, ইট ও স্ল্যাব বিক্রি করে টাকা আত্মসাৎ করেন। ২০১৯-২০ অর্থবছরে আমলীতলা বাজার থেকে আজিমগঞ্জ বাজার পর্যন্ত কাঁচা রাস্তা সংস্কারের প্রকল্প দেখিয়ে ১ লাখ ৩৭ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেছেন। ২০২১-২২ অর্থবছরে হাজী মোঃ আব্দুর রউফের ফিশারী পাড় থেকে রাজকুন্তি খালপাড় ব্রীজ এবং কাইকরদিয়া প্রতিবন্ধী স্কুল থেকে সুবন্দি হারেছের দোকান পর্যন্ত রাস্তার বেটস ফিলিং প্রকল্প দেখিয়ে ২ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। ২০২২-২৩ অর্থবছরে পূর্ব জাফরাবাদ রশিদের বাড়ি থেকে শাপলা কিন্ডার গার্টেন রাস্তার বেটস ফিলিং প্রকল্প দেখিয়ে ১ লাখ টাকা, জাল্লাবাদ মালিবাড়ি গ্রামীণ টাওয়ার থেকে মাজারুলের দোকান পর্যন্ত রাস্তার মাটি ভরাট প্রকল্প দেখিয়ে ১ লাখ টাকা এবং বাদেশ্রীরামপুর নুরু ফকিরের বাড়ি থেকে সাধেরজঙ্গল আঃ জব্বারের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তার বেটস ফিলিং প্রকল্প দেখিয়ে ১ লাখ টাকাসহ সর্বমোট ৮ লাখ ৩৭ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেন। এসব অভিযোগ ছাড়াও এর আগে গত ৬ এপ্রিল চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগ এনে বিভিন্ন দফতরে অভিযোগ দায়ের করেছিলেন ইউনিয়নের ১,২,৩ নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত ইউপি সদস্য রোকিয়া আক্তার। অভিযোগকারী ইউপি সদস্যরা হলেন, মোঃ সোহাগ মিয়া, মোঃ মতিউর রহমান, জুনায়েদ তুর্য্য, সারওয়ার আলম, মোঃ সাইদুর রহমান, আলম মিয়া, সংরক্ষিত মহিলা সদস্য নার্গিস আক্তার ও আছমা আক্তার প্রমূখ। মানববন্ধনে ওই ইউপি সদস্যরা ছাড়াও জাফরাবাদ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতা তানভীর আহমেদ, মো: জুয়েল মিয়া, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী নুসরাত সুলতানা ঊষাসহ ১০-১২ জন বক্তব্য দেন। মানববন্ধন শেষে চেয়ারম্যানের অপসারণ দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করা হয়। তবে অভিযোগের বিষয়ে জাফরাবাদ ইউপি চেয়ারম্যান আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েম বলেন, রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন করতে আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে ইউপি সদস্যরা। মানববন্ধনের বিষয়ে ফোনে জিজ্ঞেস করা হলে চেয়ারম্যান বলেন, 'আমার বিরুদ্ধে এসব করে কোনো কাজ হবে না। আমার কিছুই হবে না।' এ বিষয়ে করিমগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক নাসিরুল ইসলাম খান আওলাদ বলেন, 'জাফরাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েমের বিরুদ্ধে ওই ইউনিয়নের সদস্যদের দায়ের করা একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগটির আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করতে উপজেলা প্রশাসনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।' করিমগঞ্জের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পলাশ কুমার বসু বলেন, 'জাফরাবাদ ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অনিয়মের একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'
সম্পাদক : মোঃ মুরসালিন তালুকদার বার্তা সম্পাদকঃএম আর জয় (সাংবাদিক) অফিস : ২৪ পুরানা পল্টন, ড.নওয়াব আলী টাওয়ার লিফটের ৫ ইমেইল : bdprothombarta@gmail.com