মহান জাতীয় সংসদের তিনশত আসনের মধ্যে কিশোরগঞ্জের ৬টি আসনের ৩টিতেই আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক ঐক্য অটুট রাখার প্রয়োজনে পিতার নির্বাচনী আসনে পুনরায় প্রার্থী হচ্ছেন পুত্র-কন্যা।আওয়ামী লীগ থেকে সংসদ সদস্যও নির্বাচিত হয়েছেন।অন্য যে কোনো নেতার চেয়ে সৎ, দক্ষ ও যোগ্য বলে নিজেদের প্রমাণ করেছেন।
সবাই ইতিবাচক হিসেবেই নিয়েছেন বিষয়টিকে। কিশোরগঞ্জ-১ সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম এর আসনে তার ছোট বোন ডা. সৈয়দা জাকিয়া নূর এমপি। কিশোরগঞ্জ-৬ আসনে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন এমপি ও কিশোরগঞ্জ-৪ আসনে প্রকৌশলী রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক এমপি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী হয়ে পুনরায় দলীয় মনোনয়ন চাইবেন। পাচ্ছেন গণমানুষের সমর্থনও। নিজ নিজ পিতার আসনেই বর্তমানে এমপি তারা।
আওয়ামী লীগের রাজনীতির প্রবাদপুরুষ শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম। স্বাধীনতার আগে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি হিসেবে তিনি ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সবচেয়ে বিশ্বাসভাজন ও ঘনিষ্ঠজন। মুক্তিযুদ্ধের প্রারম্ভে পাকিস্তানি সেনাদের হাতে বঙ্গবন্ধু গ্রেফতার হওয়ার পর সৈয়দ নজরুল ইসলাম সুদৃঢ় সাহসিকতায় আওয়ামী লীগের হাল ধরেছিলেন। প্রবাসী সরকারের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি হিসেবে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।
পঁচাত্তরের ৩ নভেম্বর কেন্দ্রীয় কারাগারে নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার হন তিনি। তার অবর্তমানে কিশোরগঞ্জের রাজনীতিতে তার জ্যেষ্ঠপুত্র শুদ্ধ রাজনীতির প্রবক্তা বীর মুক্তিযোদ্ধা মরহুম সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে ১৯৯৬ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত পরপর ৫বার কিশোরগঞ্জ-১ (সদর-হোসেনপুর) আসন থেকে এমপি নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে সেই সরকারে তিনি বিমান ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান।
২০০৮ ও ২০১৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ পুনরায় বিজয়ী হলে তিনি সে দুটি সরকারেও এলজিআরডি মন্ত্রীর দায়িত্ব পান।জনপ্রশাসন মন্ত্রীর দায়িত্বে থাকা অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। সৈয়দ আশরাফ অধিকতর লাইমলাইটে আসেন ২০০৭ সালে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়। রাজনীতির কঠিনতম ওই সময়ে দলের ঐক্য ধরে রাখার জন্য প্রয়াত জিল্লুর রহমানের সঙ্গে হাত মিলিয়ে তিনি যে বিচক্ষণতার পরিচয় দেন, পরবর্তী সময়ে সেই বিচক্ষণতাই তাকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের পদে আসীন করে।
সৈয়দ আশরাফ অসুস্থ হয়ে ব্যাংককে চিকিৎসাধীন। তারপরও একাদশ সংসদ নির্বাচনে জননন্দিত নেতা হিসেবে কিশোরগঞ্জ-১ (সদর-হোসেনপুর) আসন থেকে তিনিই আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী হয়ে এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন।
তা ছাড়া কিশোরগঞ্জের জনমনে এই ধারণা বদ্ধমূল যে, পরিচ্ছন্ন ইমেজের সৈয়দ আশরাফ যতদিন জীবিত থাকবেন, ততদিন ওই নির্বাচনী আসনটি তার জন্যই নির্ধারিত ছিল। তার মৃত্যুর পর ছোট বোন ডা. সৈয়দা জাকিয়া নুর আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে পিতা ও ভাইয়ের আদর্শিক রাজনীতিকে ধারণ করে নির্বাচনী এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন করে জনমনে স্থান করে নিয়েছেন, যে তিনিই সৈয়দ পরিবারের যোগ্য উত্তরসূরী।
আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কিশোরগঞ্জ ১ সদর হোসেনপুর আসন থেকে ডাক্তার সৈয়দা জাকিয়া নূর লিপি পুনরায় মনোনয়ন পাবেন বলে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনার প্রতি বিশ্বস্ত তার নির্বাচনী এলাকার সর্বসাধারণ।কিশোরগঞ্জ-৬ (ভৈরব-কুলিয়ারচর) আসনের ৬ বারের এমপি ছিলেন বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান। তার মৃত্যুর পর তার পুত্র নাজমুল হাসান পাপন এই আসনে পর পর তিনবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনেও পাপন এ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাবেন বলে নিশ্চিত সবাই।
কিশোরগঞ্জে আওয়ামী লীগের রাজনীতির অভিভাবক হিসেবে বিবেচিত সাবেক রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। কিশোরগঞ্জ-৪ (ইটনা-অষ্টগ্রাম-মিঠামইন) আসনে তিনি ৭ বারের জনপ্রিয় এমপি ছিলেন। রাজনীতির চরম দুঃসময়েও আদর্শচ্যুত হননি।
১৯৯৬ সালে জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার হন তিনি। একই সংসদের স্পিকার হুমায়ূন রশিদ চৌধুরীর মৃত্যুর পর স্পিকার হন। ২০০১ সালে আওয়ামী লীগ বিরোধী দলে গেলে বিরোধীদলীয় সংসদ উপনেতার দায়িত্ব পান তিনি। ২০০৮ সালের সংসদে তিনি পুনরায় স্পিকারের দায়িত্ব পান। রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের মৃত্যু হলে মো. আবদুল হামিদ প্রথমে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি, পরে রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। প্রথম মেয়াদে রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব নেওয়ায় তার নির্বাচনী আসনটি শূন্য ঘোষিত হয়।
শূন্য আসনে দলীয় মনোনয়ন পান তার জ্যেষ্ঠপুত্র প্রকৌশলী রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক। এই আসনে প্রথমে উপ-নির্বাচনে এবং পরে দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তৌফিক বিপুল ভোটে এমপি নির্বাচিত হন।
পিতার রাজনীতির উত্তরাধিকারে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও এ আসনে তৌফিকই হচ্ছেন আওয়ামী লীগের একমাত্র প্রার্থী।
সাবেক তিন রাষ্ট্রপতির পুত্র-কন্যা দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিজ নিজ আসন থেকে পুনরায় আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেলে বিপুল ভোটের ব্যবধানে এমপি নির্বাচিত হবেন বলে দলীয় নেতা কর্মীরা নিশ্চিত করেছেন।
সম্পাদক : মোঃ মুরসালিন তালুকদার বার্তা সম্পাদকঃএম আর জয় (সাংবাদিক) অফিস : ২৪ পুরানা পল্টন, ড.নওয়াব আলী টাওয়ার লিফটের ৫ ইমেইল : bdprothombarta@gmail.com