কিশোরগঞ্জ এখন দুর্ভোগ ও যানজটের শহর হিসেবে পরিচিত। কিশোরগঞ্জ পৌর এলাকায় চলাফেরার প্রতিটি রাস্তার মোড় এখন, ট্রাক, বাস, রিক্সা-অটোরিক্সা, সিএনজি ও ইঞ্জিল চালিত টমটম, নসিমনসহ রাস্তার পাশে নির্মিত বিভিন্ন টং দোকান ব্যবসায়ীদের দখলে চলে গেছে। ফলে প্রতিনিয়ত সৃষ্টি হচ্ছে তীব্র যানজট। বিড়ম্বনা এবং বিভিন্ন ভোগান্তিতে পড়ছে পৌরবাসীসহ ১৩ উপজেলা থেকে শহরে আসা সাধারণ মানুষ।
কিশোরগঞ্জ এখন হয়ে গেছে দুর্বিষহ যানজটের শহর। এই যানজট রাজধানীর যানজটকেও যেন হার মানিয়ে দিন দিন বেড়েই চলেছে। পবিত্র ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে ১৩ উপজেলার মানুষ শহরে কেনাকাটার জন্য এসে ভিড় জমাচ্ছে। অনেকে নিজস্ব পরিবহন নিয়ে যানজটের সৃষ্টি করছে। সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা গেছে, শহরের প্রায় প্রতিটি মোড়েই গড়ে উঠেছে শহর থেকে বহির্গামী ব্যাটারী চালিত অটো স্ট্যান্ড। অটোচালকরা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান প্রতিদিনই প্রতিটি অটো থেকে নির্দিষ্ট হারে চাঁদা নেয়া হয়। কে চাঁদা নেয় এ প্রশ্নের উত্তরে তারা মুখ খুলতে রাজী হননি। শহরের রাস্তার উপর দাঁড়িয়ে যাত্রী উঠানামা করানোর কারণে এসব এলাকায় সারাক্ষণ লেগেই থাকে যানজট। এ ছাড়া পৌরসভা থেকে লাইসেন্স নিয়ে যে ব্যাটারী চালিত অটোগুলো শহরের চলাচল করে সেগুলোর বেশীর ভাগই রাস্তার মাঝখানে দাঁড়িয়ে যাত্রী উঠা নামা করায়। যেকারণে শহরে যানজট লেগেই থাকে।
যানজটের আরেকটি বড় কারণ হচ্ছে ব্যাটারী চালিত রিকসা ও মিশুক রিকসার পরিমান অসম্ভব বেড়ে যাওয়া। সব ধরণের যানবাহন এক সারিতে না চলে এক পাশেই তিনটি পর্যন্ত লাইন করে চলাচল করছে ফলে বিপরীত দিক থেকে আসা কোন বড় গাড়ির যাওয়ার জায়গা থাকেনা। এটাও যানজটের একটি বড় কারণ।
শহরের প্রতি মোড়ে অটো/সিএনজি স্ট্যান্ডের কারণে সেসব স্থানে সারাক্ষণই যানজট লেগে থাকে। এ ছাড়া রাস্তার পাশে ভ্যানগাড়িতে করে বাদামসহ নানা পন্য বিক্রি, ফুটপাতে দোকান বসানোও যানজটের অন্যতম কারণ। শহরের ক্লিনিকগুলোর সামনের দু’পাশে ওষুধ কোম্পানীর লোকজনের মোটরবাইক সারি করে দাঁড় করিয়ে রাখাও যানজটের অন্যতম কারণ।
কিশোরগঞ্জ শহরের পশ্চিমে গুরুদয়াল সরকারী কলেজ, পূর্ব পাশে ওয়ালীনেওয়াজ খান কলেজ, উত্তর পাশে সরকারি মহিলা কলেজ, দক্ষিণ পার্শ্বে পৌর মহিলা কলেজ, বত্রিশ কারিগরি কলেজ, বিভিন্ন কোচিং সেন্টার, সরকারী অফিস আদালত সহ শতাধিক প্রতিষ্ঠান অবস্থিত থাকার ফলে প্রতিদিন সকাল থেকে রাত অবধি পর্যন্ত হাজার হাজার মানুষ শহরের বিভিন্ন রাস্তায় চলাচল করছে। সৃষ্টি যানজটের ফলে সাধারণ মানুষ প্রতিদিনই নানা বিড়ম্বনায় পড়ছে। সে সাথে কিশোরগঞ্জের সরকারি অফিস আদালতের চাকুরিজীবীসহ শহরের বাহির থেকে নানা প্রয়োজনীয় কাজে আসা সকল মানুষেরই প্রতিদিন ছোট বড় অসংখ্য দুর্ঘটনার শিকার হতে হচ্ছে। তবে দুর্ভোগের প্রধান কারণ এই যানজট নিরসনে সংশ্লিষ্টদের যেন কোন খেয়ালই নেই। শহরের বিভিন্ন এলাকার ব্যবসায়ীরা বলেন, শহরের বিভিন্ন মোড়ে ফুটপাত, গাড়ি রাখার নির্ধারিত স্থান থাকলেও তা এখন অবৈধ অটোরিক্সা, ট্রাক, নসিমন, করিমন সহ টং দোকান ব্যবসায়ীদের হাতে চলে গেছে। এসব ব্যবসায়ীরা রাস্তার দু’পাশ দখল করে দাপটের সাথে নিজেদের সুবিধা আদায় করছে। শহরের একরামপুর মোড়, পুরানথানা মোড়, শহীদী মসজিদের সম্মুখ স্থল, বড়বাজার, জাহাঙ্গীর মোড়, মোরগ মহল মোড়, আখড়া বাজার মোড়, পিটিআই রোড, হাসপাতাল রোড, বটতলা, আদালতপাড়া, হয়বত নগর মোড়, গৌরাঙ্গ বাজার মোড়, কালিবাড়ি মোড়ে এসব চিত্র বেশি লক্ষ্য করা যায়।
সরজমিন ঘুরে দেখা যায়, আখড়াবাজার হয়ে গৌরাঙ্গবাজার থেকে পুরানথানা, হাসপাতাল বটতলা থেকে কালিবাড়ি হয়ে একরামপুর, একরামপুর থেকে সতাল বাসস্ট্যান্ড, বটতলা থেকে আদালতপাড়া, গৌরাঙ্গবাজার, তেরীপট্টি, বড়বাজারের রাস্তাসহ বত্রিশ বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত রাস্তার উপর অবৈধভাবে বিভিন্ন ফলের দোকান, কাপড়ের দোকান, খাবারের দোকানসহ অবৈধ টং দোকান গড়ে ওঠেছে। ফলে প্রতিদিন হাজার হাজার যাত্রীদের নানা ধরণের দুর্ভোগ, হয়রানিতে পড়তে হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট প্রশাসন বিভিন্ন সময় এসব স্থানে অভিযান চালিয়ে অবৈধ দোকানপাট উচ্ছেদ করলেও অদৃশ্য শক্তির কারণে এসব স্থান তারা পুণরায় দখল করছে। কিশোরগঞ্জের সচেতন মহলেরও দাবি, অচিরেই যেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ শহরে যানজট মুক্ত নিরাপদ সড়কের সকল ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।
যানজট জলাবদ্ধতা ও শহরে গরু চলাচলের বিষয়ে বৃহস্পতিবার সদর উপজেলা আইনশৃঙ্ঘলা কমিটির সভায় ক্ষোভ জানিয়ে বৌলাই ইউপি চেয়ারম্যান সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আওলাদ হোসেন বলেন, শহরে গরুর জন্য প্রবেশ করতে মানুষ ভয় করে। রাস্তায় জলাবদ্ধতা ও জানজটের কারণে জনজীবনে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে। সভার সভাপতি ও সদর উপজেলার নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকী বলেন, জানজট নিরসনে প্রশাসন আন্তরিকভাবে কাজ করছে।
শহরের আবাসিক এলাকায় হাজারো লোকের বসবাস। জলাবদ্ধতার দুর্ভোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবী জানজটমুক্ত কিশোরগঞ্জ গঠনের।