কিশোরগঞ্জে স্ত্রী হত্যা মামলায় স্বামীর মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে আদালত। এছাড়াও তাকে এক লক্ষ টাকা অর্থদণ্ড করা হয়। বৃহস্পতিবার (৯ ফেবু্রুয়ারি) দুপুর দেড়টার দিকে কিশোরগঞ্জের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১-এর বিচারক মুহাম্মদ হাবিবুল্লাহ এ রায় দেন। রাষ ঘোষণার সময় একমাত্র আসামি মো. মামুন মিয়া পলাতক ছিলেন।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি মো. মামুন মিয়া (৩৩) কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার গাগলাইল (দানাপাটুলী) এলাকার মৃত মতি মিয়ার ছেলে।
কিশোরগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের স্পেশাল পিপি অ্যাডভোকেট এম এ আফজল এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে।
মামলার এজাহারের সংক্ষিপ্ত বিবরণে জানা গেছে, কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার গাগলাইল দানাপাটুলী এলাকার মৃত মতি মিয়ার ছেল মামুন মিয়ার সাথে একই উপজেলার তারাপাশা এলাকার মিনার আলম খানের মেয়ে নন্দিনীর প্রনয়ের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। সেই প্রনয় থেকে তারা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়।
বিবাহের কিছুদিন পর থেকে স্বামী মামুন স্ত্রী নন্দিনীকে যৌতুকের জন্য অত্যাচার নির্যাতন শুরু করে। নন্দিনী স্বামীর নির্যাতনের কথা তার মাকে জানালে তার মা গোপনে মেয়ের জামাই মামুনকে কিছু টাকা দেয়। কিছু দিন পরে আবার মানুন নন্দিনীকে তার বাবার বাড়ি থেকে ৫০ হাজার টাকা এনে দিতে চাপ সৃষ্টি করে। নন্দিনীকে বাবার বাড়ী থেকে কোন টাকা এনে দিতে পারবে না বলিলে মামুন আবার নন্দিনীকে শারীরিক ও মানসিক অত্যাচার নির্যাতন শুরু করে।
২০১৩ সালে ২০ এপ্রিল মামুন তার কিশোরগঞ্জের তারাপাশার দিদার মিয়ার ভাড়া বাসায় স্ত্রী নন্দিনীর নিকট আবার ৫০ হাজার টাকা যৌতুক দাবী করে। নন্দিনীর যৌতুকের টাকা এনে দিতে অস্বীকার করিলে মারপিট করে নন্দিনীর শরীরে কেরোসিন ঢালিয়া আগুন লাগিয়ে পালিয়ে যায়। প্রতিবেশী লোকজন নন্দিনীকে মুমুর্ষ অবস্থায় উদ্ধার করে কিশোরগঞ্জ ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করে। সেখানে তার অবস্থা অবনতি হলে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করে। ঘটনার ৫দিন পর ২৫ এপ্রিল সন্ধ্যা সাড়ে ৭ টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তার মৃত্যু হয়।
নন্দিনীর মৃত্যুর সময় তাদের দাম্পত্য জীবনে একটি ৮ মাসের কন্যা সন্তান ছিলো।
এ ঘটনায় নন্দিনীর বাবা মিনার আলম খান বাদী হয়ে স্বামী মামুনকে একমাত্র আসামি করে ১ মে কিশোরগঞ্জ সদর মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
রাষ্ট্রপক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন কিশোরগঞ্জ আদালতের স্পেশাল পিপি অ্যাডভোকেট এম এ আফজল।
মামলাটির তদন্ত শেষে একই বছরের ১২ সেপ্টেম্বর কিশোরগঞ্জ সদর মডেল থানার তৎকালীন সাব ইন্সপেক্টর মো. ফজলুল হক আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে। দীর্ঘ শোনানি শেষে আজ বৃহস্পতিবার এ মামলার রায় ঘোষণা করে আদালত।