আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে সরগরম হয়ে উঠেছে কিশোরগঞ্জের রাজনৈতিক অঙ্গন। প্রার্থিতা জানান দিতে মাঠে নেমে পড়েছেন আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশীরা। দলীয় কর্মকাণ্ডে সরব উপস্থিতিসহ সামাজিক কর্মকাণ্ডে ব্যস্ত সময় পার করছেন নেতারা। জেলার ছয়টি সংসদীয় আসনের পাঁচটি আওয়ামী লীগের দখলে রয়েছে। আগামী নির্বাচনে সব কটি আসনই পেতে চায় দলটি। তবে আসন পুনরুদ্ধার করতে চায় বিএনপি। আর একক নির্বাচন করতে চায় জাতীয় পার্টি। আওয়ামী লীগের নীতি-নির্ধারকরা বলছেন,ছয়টি আসনই ধরে রাখতে কাজ করছে জেলা আওয়ামী লীগ। সে অনুযায়ী জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন কমিটিগুলোকে ঢেলে সাজানো হচ্ছে। বিএনপি বলছে, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে মানুষ বিএনপি প্রার্থীদের বিপুল ভোটে বিজয়ী করবে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মনোনয়নপ্রত্যাশী নেতারা দল ও এলাকায় যোগাযোগ বাড়িয়ে দিয়েছেন। কারা দলীয় প্রার্থী হতে পারেন এ নিয়ে নেতা-কর্মীদের মধ্যেও আলোচনা চলছে। কিছু প্রার্থী এলাকায় অনুপস্থিত থাকলেও নির্বাচনে প্রার্থী হবেন বলে জানা গেছে।
কিশোরগঞ্জ-১ (সদর-হোসেনপুর) আসনটিতে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে জোর আলোচনায় রয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারি কৃষিবিদ মসিউর রহমান হুমায়ুন।দলীয় নেতাকর্মীদের সাথে তার রয়েছে নিবিড় যোগাযোগ।তা ছাড়া অসহায় হতদরিদ্র রোগীদের মাঝে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলের চেক প্রদানে তার রয়েছে সুখ্যাতি।এ আসনের বর্তমান এমপি ডা:সৈয়দা জাকিয়া নূর লিপি।এবার ও মনোনয়ন চাইবেন তিনি।এছাড়া আলোচনায় রয়েছেন মেজর জেনারেল (অব:) সৈয়দ শাফায়াতুল ইসলাম,জেলা আ.লীগের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশফাকুল ইসলাম টিটু ও রাষ্ট্রপতি পূত্র রাসেল আহমেদ তুহিন।
বিএনপি থেকে এই আসনে ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন জেলা কমিটির সাবেক সম্পাদক মাসুদ হিলালী। দলের সাংগঠনিক তৎপরতা থেকে তিনি এখন অনেকটা দূরে।গত নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পেয়েছিলেন জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি,সাবেক ঢাকা বিভাগীয় স্পেশাল জজ রেজাউল করিম খান চুন্নু।এবার ও তিনি মনোনয়ন প্রত্যাশী।এ ছাড়াও জেলা কমিটির সাবেক সম্পাদক ওয়ালীউল্লাহ রাব্বানী,বর্তমান সহ-সভাপতি এড.শরিফুল ইসলাম শরীফ,যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক ও সদর উপজেলা বিএনপির আহবায়ক খালেদ সাইফুল্লাহ সোহেল,সাংগঠনিক সম্পাদক হাজী ইসরাইলের নাম শোনা যাচ্ছে।এ আসনে জাতীয় পার্টি থেকে নির্বাচন করতে চান জেলা সভাপতি আশরাফ উদ্দিন রেনু।
এদিকে ১৪ দলীয় জোটের শরিক দল গণতন্ত্রী পার্টির জেলা কমিটির সভাপতি অ্যাড. ভূপেন্দ্র চন্দ্র ভৌমিক এই আসন থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশী।
কিশোরগঞ্জ-২ (কটিয়াদি-পাকুন্দিয়া) :
এ আসনের বর্তমান এমপি সাবেক আইজিপি নূর মোহাম্মদ।তিনি আগামী নির্বাচনেও দলীয় সম্ভাব্য প্রার্থী। তবে সাবেক এমপি সোহরাব উদ্দিন ও আওয়ামী লীগের অন্যতম মনোনয়নপ্রত্যাশী।এছাড়াও দেলোয়ার হোসেন এফসিএমএ ও পাকুন্দিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম রেনু মনোনয়ন চাইবেন বলে শোনা যাচ্ছে।এ আসনে বিএনপি থেকে একাধিকবার এমপি ছিলেন মেজর (অব.) আখতারুজ্জামান। তিনি বর্তমানে বহিষ্কৃত।নির্বাচনের আগে বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার হলে তিনি এবার ও প্রার্থী হবেন বলে জানা যায়।এছাড়াও বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে জোর আলোচনায় রয়েছেন জেলা বিএনপির সহসভাপতি রুহুল আমিন আকিল। আশফাক আহম্মেদ জুন, সুইডেন প্রবাসী শহীদুজ্জামান কাকন ও পাকুন্দিয়া উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাড. মো. জালাল উদ্দিন ও মনোনয়ন চাইবেন।
কিশোরগঞ্জ-৩ (করিমগঞ্জ -তাড়াইল):
এ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে তিনি একাধিকবার এমপি নির্বাচিত হন।আগামীতে জাতীয় পার্টি পৃথকভাবে নির্বাচন করলে তিনি হবেন জাতীয় পার্টির প্রার্থী।তবে তাকে নিয়ে আওয়ামী লীগের মধ্যে রয়েছে চাপা ক্ষোভ।নৌকা প্রতীকে দলীয় প্রার্থী চায় দলের তৃণমূলের নেতাকর্মীরা।দীর্ঘদিন দলীয় এমপি না থাকায় এ আসনে আওয়ামী লীগের বিভক্তি সৃষ্টি হয়েছে।
এ আসনে আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে মাঠে রয়েছেন প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. আ ন ম নৌশাদ খান,এছাড়াও জোর আলোচনায় আছেন করিমগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নাসিরুল ইসলাম খান আওলাদ।এ ছাড়াও আরও যাদের নাম শোনা যাচ্ছে জেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের সাধারণ সম্পাদক শামীম আহমেদ,শিল্পপতি এরশাদ উদ্দিন, মাহফুজুল হক হায়দার প্রমুখ।
বিএনপি থেকে এ আসনে এমপি ছিলেন সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ড. এম ওসমান ফারুক। বেশ কয়েক বছর ধরে তিনি দেশের বাইরে।পরিবেশ সৃষ্টি হলে আগামীতেও তিনি বিএনপি থেকে প্রার্থী হতে পারেন।এ ছাড়া যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তারা হলেন- জেলা বিএনপির সহসভাপতি জাহাঙ্গীর আলম মোল্লা ও অ্যাড. জালাল মোহাম্মদ গাউস।এ আসনে আরেকজন শক্তিশালী প্রার্থী ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ জেলা কমিটির আমির মাও.আলমগীর হোসাইন তালুকদার।
কিশোরগঞ্জ-৪ (ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম) :
আওয়ামীলীগের ঘাটি হিসেবে পরিচিত এ আসনের সংসদ সদস্য রাষ্ট্রপতিপুত্র রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক।তিনি হাওর উন্নয়ন তথা অবহেলিত হাওরের মানুষের কল্যাণে ব্যাপক ভূমিকা রেখেছেন।হাওরের মানুষের সাথে তার রয়েছে নিবিড় বন্ধন। আগামী নির্বাচনে তিনিই দলের একমাত্র প্রার্থী।এ আসনে আওয়ামী লীগের শক্ত প্রতিদ্বন্দী বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাড. ফজলুর রহমান।এছাড়াও এ আসনে বিএনপি থেকে সৈয়দ অসীম ও ডা. ফেরদৌস আহমেদ চৌধুরী লাকীর নামও শোনা যাচ্ছে।
কিশোরগঞ্জ-৫ (নিকলী-বাজিতপুর) :
এ আসনের বর্তমান এমপি মো. আফজাল হোসেন। আগামীতেও তিনিই দলীয় মনোনয়ন পাবেন এমন টাই প্রত্যাশা করে নেতাকর্মীরা।এছাড়াও এ আসনে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক অজয় কর খোকন মনোনয়ন চাইবেন বলে শোনা যাচ্ছে।
এ আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও জেলা বিএনপির সহসভাপতি শেখ মুজিবুর রহমান ইকবাল।এছাড়াও নিকলী উপজেলা বিএনপির সভাপতি এড.বদরুল মোমেন মিঠু,সাবেক কেন্দ্রীয় ছাত্রদল নেতা শফিকুল আলম রাজনের নাম শোনা যাচ্ছে।
কিশোরগঞ্জ-৬ (ভৈরব-কুলিয়ারচর) :
এ আসনের বর্তমান এমপি বিসিবির সভাপতি সাবেক রাষ্ট্রপতিপূত্র নাজমুল হাসান পাপন। আগামীতেও তাকেই দলের একমাত্র সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে মনে করা হচ্ছে। এ আসনে বিএনপির সম্ভাব্য একক প্রার্থী রয়েছেন- দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ও জেলা বিএনপির সভাপতি মো. শরীফুল আলম। দলীয় কর্মসূচিসহ নানা কর্মকাণ্ড নিয়ে তিনি এলাকায় সক্রিয়।
সম্পাদক : মোঃ মুরসালিন তালুকদার বার্তা সম্পাদকঃএম আর জয় (সাংবাদিক) অফিস : ২৪ পুরানা পল্টন, ড.নওয়াব আলী টাওয়ার লিফটের ৫ ইমেইল : bdprothombarta@gmail.com