কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি : বারো ভূঁইয়াপ্রধান মসনদ-ই-আলার ঈশা খাঁ দ্বিতীয় রাজধানী রূপে জঙ্গলবাড়ির খ্যাতি সর্বজনবিদিত। কিশোরগঞ্জের চেয়ে যে নামটি অধিক প্রাচীন, তা হলো জঙ্গলবাড়ি। দেশের গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহ্য ঈশা খাঁর দুর্গ জঙ্গলবাড়ি। করিমগঞ্জ উপজেলার কাদির জঙ্গল ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত। জেলা শহর থেকে মাত্র চার কিলোমিটার দূরবর্তী জঙ্গলবাড়িতে বর্তমানে প্রাচীন দুর্গের ধ্বংসাবশেষই কেবল পাওয়া যায়। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে ঈশা খাঁর দুর্গ।
এখানে প্রাচীন ইটের টুকরো ও মৃৎপাত্রের ধ্বংসাবশেষ প্রচুর পাওয়া যায়। দক্ষিণ-পশ্চিম ও উত্তর দিকে আছে গভীর ও প্রশস্ত পরিখা। প্রায় সম্পূর্ণ ভগ্ন দুর্গ-প্রাচীর, ধ্বংসপ্রাপ্ত দরবার হল (মতান্তরে কাচারি), প্রাচীন মসজিদ, মসজিদের সামনে পুকুর, পুকুর পাড়ে বাঁধানো দেয়াল এবং একটি ভবনের ভিত্তি ভূমি, যা বর্তমানে সবুজ ঘাসে আচ্ছাদিত। যা পুরনো দিনের কথা মনে করিয়ে দেয়। মসনদে এলাহি ঈশা দ্বিতীয় রাজধানী হিসেবে জঙ্গলবাড়িতে বসবাস করতেন। কেদারনাথ মজুমদার লিখেছেন- লক্ষ্মণ হাজো নামক এক কোচ রাজা বর্তমান জঙ্গলবাড়ি নামক স্থানে দুর্গ নির্মাণ করে হাজবাদী শাসন করছিলেন। ষোড়শ শতকের চতুর্থ পাদে মোগলদের কাছে ঈশা খাঁ পরাজিত হয়ে জঙ্গলবাড়ি এলাকায় আগমন করেন।
ঈশা খাঁ লক্ষ্মণ হাজোর রাজধানী জঙ্গলবাড়ি আক্রমণ করে দখল করেন। দুর্গটি দখলের পর তিনি এর প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সুদৃঢ়করণ, দুর্গের সংস্কার সাধন, তিন দিকে পরিখা খনন এবং নরসুন্দা নদীর সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে দুর্গটিকে একটি গোলাকার দ্বীপের আকার দেন। এরপর থেকেই জঙ্গলবাড়ি হয়ে উঠে জাঁকজমকপূর্ণ ও জমজমাট নগর। পরে এই জঙ্গলবাড়ি দুর্গ থেকে ঈশা খাঁ সোনারগাঁ দখল করেন। সেখানে ঈশা খাঁ তার রাজধানী স্থানান্তর করেন। ফলে জঙ্গলবাড়ি হয়ে ওঠে তার দ্বিতীয় রাজধানী। জঙ্গলবাড়ির জৌলুস তখন থেকে কমে যায়।ঈশা খাঁর স্মৃতি বিজড়িত ঐতিহাসিক স্থাপনার এই দুর্গটি দেখতে প্রতিদিন দূর দুরান্ত থেকে দর্শনার্থীরা ছুটে আসে।